বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬

আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে লিওনেল মেসির বিদায়ে যার যা প্রতিক্রিয়া

শেখ হাসিনা :
এই জাতি জানে— চক্রান্ত করে একুশ বছর ধরে আওয়ামি লিগকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি। জনগণ সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আওয়ামি লিগকে আবার ক্ষমতায় এনেছে। আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট, আমার কাছে তথ্য আছে— বিএনপি-জামায়াত চক্রই ষড়যন্ত্র করে আর্জেন্টিনাকে ত্রিশ বছর ধরে বিশ্বকাপ-ট্রফি থেকে বঞ্চিত রেখেছে। আর্জেন্টিনার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রও, ইনশাআল্লাহ, আমরা মোকাবেলা করব। নোবেল-ব্যবসায়ী যে সুদখোরটা বিশ্বব্যাংককে কান-পড়া দিয়ে পদ্মাসেতুর নির্মাণ ব্যাহত করতে চেয়েছিল, জাতি জানে, সেই সুদখোরটির চক্রান্তেই মেসি বাধ্য হয়ে দল ছেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় ফুটবলার রপ্তানি করে ২০৪১ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনাকে আবারও আমরা বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেবো।

আনিসুল হক :
রংপুর থেকে প্রথম যে বছর আমি ঢাকায় আসি, সেই বছরের ঘটনা। বুয়েটের হোস্টেলে ঘুমোনোর সময়ে এক রাতে স্বপ্নে দেখি আর্জেন্টিনায় ফুটফুটে একটা বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাটার বাবা আমাকে বলছে, 'আপনি তো বিশ্বসেরা একজন কথাশিল্পী। আমার বাচ্চাটার একটা নাম ঠিক করে দিন না, দাদা।' কথাটা শোনার পর আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললাম, স্বপ্নের মধ্যেই আমি এগারো মিনিট কাঁদলাম। ভেবে অবাক হলাম— আর্জেন্টিনার লোকও আমার বই পড়ে! লোকটাকে কাঁদতে-কাঁদতে বললাম, 'ভাই, আমার ডাকনাম ম দিয়ে— মিটুন। আপনার ছেলের নামও ম দিয়ে রাখুন— মেসি।' এর পর কেটে গেল অনেক বছর। হঠাৎ একদিন দেখি সেই মেসি আর্জেন্টিনা ফুটবল দলে খেলছে, বাকি ইতিহাস তো সবার জানা।

অভিমান করে মেসি ছেলেটা নাকি জাতীয় দল ছেড়ে দিয়েছে। শুনেই আমি ওকে ফোন করে প্রচুর কেঁদেছি। আমি নিশ্চিত— আমার কান্নার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাগলটা অবসর ভেঙে দলে ফিরে আসবে।

মুসা যেভাবে এভারেস্ট ছুঁয়েছে, মেসিও সেভাবে নিজেকে নিয়ে গেছে এভারেস্ট-সম উচ্চতায়। মুসা, মেসি, আমি প্রায়ই লিটনের ফ্ল্যাটে চা-চু খাই। দেশে এলে মেসি ছেলেটা আমার অটোগ্রাফ নিয়ে যায়, বউয়ের জন্য আমার বই কিনে যায়। এসব দেখে আমি ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলি। ও এই তো সেদিন আমার 'মা' বইটা ৩০% ছাড়ে প্রথমা থেকে কিনে নিয়ে গেল। ভাবতে ভালো লাগে মুসা, মেসি, মিটুন, মা— চারটা শব্দেরই শুরু ম দিয়ে!

খালেদা জিয়া :
অ্যাই সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার, অ্যাই সরকার মেসিবাদী সরকার। দেশ চালাতে ব্যর্থ হওয়ার পরও ইনারা অবৈধভাবে গদি দখল করে আছে। ট্রফি পেতে ব্যর্থ হওয়ার পরও আওয়ামি লিগের মদদে আর্জেন্টিনার ঐ মেসি দলের অধিনায়কত্ব আকড়ে ধরে রেখেছিল। লন্ডনপ্রবাসী ইতিহাস ইঞ্জিনিয়ার তারেক রহমান আন্দোলন করে ব্রিটেনকে ইইউ থেকে হটিয়ে দিয়েছে, মেসিকে হটিয়েছে দল থেকে। ইদের পর আন্দোলন করে আমরা আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রীরও পতন ঘটাব এনশাআল্লাহ। ক্ষমতায় গেলে আর্জেন্টিনার নামই আমরা পালটে দেবো এবং তারেকের নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা ঘোষণা করব। ভারতের হিন্দু কবি রবীন্দ্রনাথ ফুটবল নিয়ে কবিতা লিখেছে, সে বলেছে— বল দাও মোরে, বল দাও; প্রাণে দাও মোর শকতি; সকল হৃদয় লুটায়ে তোমারে করিতে প্রণতি। অতএব ফুটবল একটি হিন্দুয়ানি খেলা। আমরা ক্ষমতায় গেলে এই হিন্দুয়ানি ফুটবল খেলা পৃথিবী থেকে নিষিদ্ধ করব এবং লীলাখেলাকে জাতীয় খেলা ঘোষণা করব।

তসলিমা নাসরিন :
সেই মেয়েবেলা থেকেই আমি ফুটবলের বেশ ভক্ত। কৈশোর পেরিয়ে যখন আমি যৌবনে পদার্পণ করেছি, যখন আমার মৌচাকে প্রণয়ের মৌমাছি বাসা বাঁধা শুরু করেছে, শরীরে বওয়া শুরু করেছে বেয়াড়া বাতাস; তখন আমি পাড়ার এক ফুটবলারের প্রেমে পড়ি এবং ফুটবলারটি যথারীতি আমার সবটুকু মৌ শুষে খেয়ে থাবা মারে অন্য কারো চাকে। সেই থেকেই আমি জানি— নোংরা পুরুষজাতি মন চেনে না, চেনে খালি মৌ আর মাংস।

যেবার আমি প্রথমবার বুয়েন্সআয়ার্সে গেলাম, ম্যারাডোনা এলো আমার অটোগ্রাফ নিতে। লজ্জা বইটা পড়ে ও আমার ভক্ত হয়েছে। যতক্ষণ অটোগ্রাফ দিচ্ছিলাম, খেয়াল করে দেখলাম ও আমার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরুষজাত— বুক ছাড়া আর কী বা চিনবে! এভাবে কত পুরুষ আমার বুকের দিকে তাকিয়েছে, ইয়ত্তা নেই। এর পর ম্যারাডোনা আমাকে ডিনারের অফার দিলো, আগ্রহবশত গেলামও। যেভাবে পর্তুগালে রোনালদো আমার পিঠে হাত দিয়েছিল, লন্ডনে যেভাবে আমাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেছিল বেকহাম; ম্যারাডোনাও ঠিক সেভাবেই ডিনারে নিয়ে আমাকে খুবলে খাওয়ার চেষ্টা করেছে। কোনোভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে এসেছি সেদিন। ফুটবলারগুলো টাকার কুমির হতে পেরেছে, মানুষ হতে পারেনি। আমাকে দেখলেই ফুটবলারগুলো কেন যেন বেজন্মা হয়ে যায়!

মেসি নামক এক ফুটবলার নাকি অবসর নিয়েছে। তো কী হয়েছে? কেন এত মাতামাতি তাকে নিয়ে? সে পুরুষ বলেই তাকে নিয়ে এত হৈচৈ। কই, কোনো নারী ফুটবলারকে নিয়ে এত হৈচৈ হয় না! এই যে আমি এত খেটেখুটে ৪৩টা বই লিখলাম, আমাকে নিয়ে পৃথিবীতে কোনো মাতামাতি নেই; যত মাতামাতি ঐ খাটো-বেটে-নপুংসক মেসিকে নিয়ে! এই পৃথিবী পুরুষের না হয়ে মানুষের হবে; যদি একটা টিমের ১১জনের ৫জন হয় পুরুষ, ৬জন হয় নারী।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ :
কে এই মেসি? হু ইজ হি? তোমরা শেষ কবে দুধ দিয়ে গোসল করেছ? আর্জেন্টিনা শেষ কবে ট্রফি জিতেছে? সেই ১৯৮৬ সালে, যখন আমি ক্ষমতায়। আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন দেখতে চাইলে তোমরা আমাকে আবার ভোট দাও। আমি আসল প্লেয়ার, মেসি না। মেসি পারবে না আর্জেন্টিনার বন্ধ্যাত্ব ঘোঁচাতে, পারব শুধু আমি। ও মাঠের প্লেয়ার, আমি খাটের প্লেয়ার। অভিমান করে সে দল থেকেই আউট হয়ে যায়, আমি অত সহজে আউট হই না। ও তো শুধু স্ট্রাইকার। আমি স্ট্রাইকারও, গোলকিপারও। আমি যেভাবে বল ধরি; মেসি সেভাবে পারে না, না, না। মেসি নাকি সারা জীবনে পাঁচটা ব্যালন ডি'অর জিতেছে। আমি তো প্রতি রাতেই পনেরোটা বেলুন ডি'অর জিতি! জিতি কি না— বিশ্বাস না হলে তোমরা শাকিলা জাফরকে জিজ্ঞেস করো, জিনাত মোশাররফকে জিজ্ঞেস করো।

শেখ হাসিনা আমাকে প্রেসিডেন্ট বানানোর লোভ দেখিয়েও বানায়নি, আজকে থেকে আমি চৌদ্দ দলে নাই। কোনো আসল পুরুষ চৌদ্দ দলে থাকতে পারে না। আগামী বছর আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করব। নির্বাচিত না হলে আমি আত্মহত্যা করব, তখন তোমরা আমার বলে থুথু দিয়ো।

সংগৃহিতঃ https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1193696017328487&id=100000643000330

কোন মন্তব্য নেই: