বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

স্বাধীনতা প্রিয় স্বাধীনতা

প্রথম সেমেস্টারে ক্লাসে দুদিন হাত তুলসিলাম। একদিন প্রফেসর বাংলাদেশকে 'ব্যাংলাডেশ' বলায়, আরেকদিন 'দোল দোল দুলুনী' গানের সুরকে একজন 'ইন্ডিয়ান' মিউজিক বলায়। এক পাকিস্তানি প্রফেসর বলেছিলেন, 'তোমরা লাকি যে তোমরা আলাদা হয়ে গেসিলা। আমাদের অবস্থা দেখো। অনেক ভালো আছো তোমরা।' সেন্ট্রাল পার্কে এক বিদেশিনী ছবি তুলে দেওয়ার পর দেশের নাম জানতে চাইসিলো। বাংলাদেশ শুনে জ্যাকেট খুলে দেখালো, 'দেখো, মেইড ইন বাংলাদেশ। খুবি ভালো জ্যাকেটটা।' পাকিস্তানি এক ছাত্র একদিন বলছিল, 'তোমাদের সাথে আবার যুদ্ধ হওয়া দরকার, এইবার সাকিবের জন্য।' তার পাশের জন যোগ করলো, 'মাশরাফিকে বাদ দিলি ক্যান? শালা আমরা এতো বছরে একটা ক্যাপ্টেন জোটাইতে পারি না।'

আমার কাছে এই ছোট্ট অর্জনগুলোই স্বাধীনতা। মাইক্রো-ইকোনমিক্স ক্লাসে প্রফেসর যখন ড. মুহম্মদ ইউনুস এর উদাহরণ দেন, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার ক্লাসে যখন রিপোর্ট লিখতে হয় একমাত্র জাতি হিসেবে রক্ত দিয়ে কেনা ভাষা আন্দোলনের উপরে, কোরিয়ান বান্ধবী যখন বলে আজকে তাদের ন্যাচারাল ক্যালামিটিস ক্লাসে পড়ানো হইসে বাংলাদেশের কথা আর কীভাবে আমরা প্রতিবারেই দুর্যোগের পরও মাথা তুলে দাঁড়াই, সিয়েরা লিওনের নতুন ছাত্রীটা যখন ক্যাফেতে দেখা হলেই বলে 'কেমন আছো, আমি কিন্তু অল্প বাংলা বলতে পারি' বা সুদানের ছাত্রটা যখন অকপটে স্বীকার করে 'তোমাদের সেনাবাহিনী আমাদের আশা, আমাদের বন্ধু', যখন টেলিকম্যুনিকেশনের ভিসিটিং প্রফেসর ফেসবুকের বাস্তব ব্যবহার দেখাতে গিয়ে রানা প্লাজার উদ্ধার কাজের কথা বলেন... আমি স্বাধীনতা দেখি। হ্যাঁ, আমি অনেক সমস্যাও দেখি। কিন্তু সম্ভাবনাগুলো, আশাগুলো, ভালোবাসাগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী। আমি গর্বিত, আমার একটা স্বাধীন দেশ আছে। পড়েছিলাম, পরাধীনতার যন্ত্রণা বিদেশে না গেলে বোঝা যায় না। আমি অসম্ভব আনন্দিত, সেই যন্ত্রণাটা আমাকে পেতে হয় না।

এই শান্তি, এই সম্মান, এই পরিচয়টা দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ প্রিয় বাংলাদেশ।

Copy paste from;

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=992401967464639&id=100000845366161

কোন মন্তব্য নেই: