বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১২

আমাদের অতিমাত্রায় রাজনীতি সচেতনতা আমাদের উন্নতির প্রধান অন্তরায়

আমার এক শিক্ষক একদিন ক্লাসে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, দেখ আমাদের সাধারন মানুষের অবস্থা। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তারা ৩০০ সিটের অন্তত ৯০০ প্রাথীর নাম ও ইতিহাস বলতে পারবে। কিন্তু তাদের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, আপনার এলাকার দশজন ভালোমানুষের নাম বলুন তারা বলতে পারবেনা। এর মানে কি? মানুষ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসে? নাকি ওদের পাবলিসিটি বেশী?

পত্রিকায়, মিডিয়ায় সারাদিন ওদের প্রচারণা চলে। টক শোগুলোতে ওদের আনা হয়। যারা রাজনীতিবিদ নয় তাদের দিয়েও রাজনীতির আলাপ করানো হয়। ওরাই প্রকৃত হিরো। স্পটলাইট সব সময় ওদরে উপর। খবর হয় সারাদিন। সারাদিন ওদের নিয়ে আলোচনা হয় পথে ঘাটে, মাঠে ময়দানে, অফিসে আদালতে, হাসপাতালে, পাবলিক বাসে, চায়ের টেবিলে…সবাই রাজনীতি সচেতন…সবাই রাজনীতি বুঝে…রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের এই অসীম আগ্রহই ওদের এই অসীম শক্তির উৎস বলে আমার মনে হয়।

আমার এক সিনিয়র সহকর্মী অফিসের কাজে একবার হংকং এ গিয়েছিলেন। তার মুখে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। তিনি গেছেন মসজিদে নামাজ পড়তে। সাথে আমাদের দেশীয় এক ব্যক্তি যিনি ওখানেই চাকুরী করেন। মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলেন। একজন মানুষ পোষ্টার বিতরণ করছে। রাস্তা দিয়ে এক যুবক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাকে ওই লোক পোষ্টার দিতে গেলে যুবকটি তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হাত দিয়ে সরিয়ে চলে গেল। কিন্তু লোকটি দমে না গিয়ে তার কাজ চালিয়ে গেলেন। আমার সহকর্মী তার সঙ্গের ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কি? উনি বললেন, লোকটা মেয়র পদপ্রার্থী। তাই নাকি? এই অবস্থা কেন? ওনার কি কোন জনপ্রিয়তা নাই? উনিই তো মেয়র হবেন।

কারণ, মেয়র পদে দাড়িয়েছেনই তিনজন। একজন বড় ব্যবসায়ী। ব্যস্ত মানুষ। উনি বেশীরভাগ সময়ই প্লেনে থাকেন ব্যবসার প্রয়োজনে। আরেকজন এই ভদ্রলোকের ধারে কাছেও নাই। খাইছে যেই লোক নিশ্চিত মেয়র হবে তাকেই মানুষ কুকুরের মত খেদায়।

আপনাদের সবারই আত্নীয়-স্বজন বিদেশে থাকেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, উন্নত দেশগুলোতে রাজনীতিবিদদের কেমন সম্মান দেখানো হয়। আমি যতজনকেই জিজ্ঞেস করেছি সবাই বলেছেন, আমরা এই প্রজাতিকে যত সম্মান দেই, যত আগ্রত দেখাই ওদের ব্যাপারে, যত আলোচনা করি ওদের নিয়ে উন্নত বিশ্বে ততটা নেই। বরং ওরা সবসময়ই রাজনীদিদদের উপর অসন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা এত সন্তুষ্ট কেন?

আমি অনেকের সাথে আলোচনা করেছি এই ব্যাপারে। মুখে বলে, এরা সবাই খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই একটা দলকেই ওরা খারাপ মনে করে। এই দল তবু ওই দল থেকে কম খারাপ। সবাইকে সমানভাবে খারাপ মনে করতে পারেনা…তাচ্ছিল্য দেখাতেও ভয় পায়…মনে করে এই দলের তবু একটা আদর্শ আছে অন্যদের তো তাও নেই। অথচ ওরা একজোট হয়ে ব্যবসা করে, লুটের মাল ভাগ করে, ওদের ছেলে মেয়েতে বিয়ে হয়। কোন নীতি আদর্শ ওদের নেই। কিন্তু আমরা মনে করি ওরা অমুকের আদর্শ অনুসরন করে। কিছু চুরি ওরা করতেই পারে। অনেক উদার আমরা।

আর আমাদের মিডিয়া তো মিডিয়াই। সারাদিন রাজনীতিবিদ অথবা রাজনীতি বিষয়ক সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচারে ওদের অদম্য আগ্রহ। খুবই অল্প খরচে বিরাট কাটতি। দিনের বেশীরভাগ সময়ই আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা। এতটা সম্মান কি ওদের প্রাপ্য? ওদের আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারিনা কেন? ওরাতো আমাদের নিয়মিত অবহেলা দেখায়। খারাপ মানুষ নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা না করে ভালো মানুষকে নিয়ে কথা বলা ভালো নয়কি?

মিডিয়ার লোকেরা হয়ত বলবেন, ভাই আমরা কি করবো? মানুষ এসব দেখতে বা জানতে পছন্দ করে। ভাই মানুষ নেশা করতে পছন্দ করলে আপনি নেশাদ্রব্য বিক্রি করবেন?

আমরা রাজনীতিবিদদের অবহেলা করতে শুরু করলেই,

তাচ্ছিল্য দেখানো শুরু করলেই,

অসম্মান করা শুরু করলেই

ওরা জনগনকে সম্মান করতে শিখবে বলে আমার ধারনা।


কোন মন্তব্য নেই: