বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

তেল শিল্প!!!

A great write up on OIL industry by Sakib Rayhan

চাটুকার/তোষামোদকারী/তেলবাজ

ভুমিকাঃ যুগ যুগ ধরে চাটুকারেরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করছে।প্রকৃতপক্ষে তারা কেবল বসবাসই করছে না, বরং সদর্পে টিকে আছে।এদেরকে ভদ্র ভাষায় তোষামোদকারী এবং বহুল প্রচলিত ভাষায় তেলবাজ বলা হয়।

সংজ্ঞাঃ যারা নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বা নিজের অবস্থানে টিকে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে(বস,প্রভাবশালী/ক্ষমতাবান ব্যাক্তি কিংবা যাকে দিয়েই নিজের সুবিধা পাওয়া যাবে)এক নিজস্ব উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে(শারীরিক/মুখের ভাষা)সন্তুষ্ট করে ফেলতে পারে তাদেরকে চাটুকার বলে।

বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীঃ একজন চাটুকার অবশ্যই নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের একাধিক বা সবগুলো গুণাবলী নিজের করে নিতে সমর্থ হবেঃ

১।যাকে তেল মারে তাকে দেখলেই মুখে কৃত্রিম এক ধরনের বিগলিত হাসির উপস্থিতি হবে।এই হাসিটা দেয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব।এমনকি বস যদি পশ্চাদ দেশে লাথিও মারে তাহলেও চাটুকারের সেই ট্রেড মার্ক হাসিটা মুখ থেকে যাবে না।

২। চাটুকার যদি চাকুরীজীবী হয় তাহলে বস পরিবর্তন হলে নতুন বসের সাথে একই তেলবাজী বজায় রাখবে।সুযোগ পেলে এমন এক আচরণ করবে যেন পুরানো বসকে সে কখনও পাত্তাই দেয় নি।

৩। তেল মারার সময় হাত কচলানোটাকে এরা একটা শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যাবে।দূর থেকে দেখলে মনে হবে হাতে কাঁদা মাটি মেখে কোন এক অপূর্ব ভাস্কর্য তৈরি করছে।

৪। এরা খুব দারুণভাবে প্রয়োজনীয় ব্যাক্তির মাইন্ড রীড করতে পারে।নিজের ব্যক্তিত্ব, রূপ,লিডারশীপ কোয়ালিটি,পোশাক,জ্ঞান ইত্যাদি যে বিষয়ে বস তেল খেতে পছন্দ করবে সেই ফিল্ড দ্রুত চিহ্নিত করে একজন চাটুকার বসকে তৈলমর্দন শুরু করে দিবে।

৫। চাটুকারদের তেল মারাটা এতটাই শৈল্পিক ও Irresistible  হবে যে কোন কারনে যদি বস বুঝেও যায় যে তাকে তেল মারা হচ্ছে তাতেও সে খুশী হবে।   

৬। একজন চাটুকার অবশ্যই পরনিন্দা ও পরচর্চা কারী।অন্যকে খারাপ ও ছোট করার মাধ্যমেই সে তার নিজের অদক্ষতা ঢাকতে থাকে।

৭।স্থান,কাল ও পাত্র সম্পর্কে ওদের দারুণ জ্ঞান থাকে।কারণ তেল মারা কতটা সার্থক ও কার্যকরী হবে সেটা এগুলোর উপর নির্ভর করে।

৮।এরা হল শৈল্পিক মিথ্যাবাদী।কারণ তেলবাজী ও সত্যবাদিতা একসাথে অবস্থান করতে পারে না।

৯।নির্লজ্জ হওয়া অতি আবশ্যক।আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলে তার প্রশংসা করে যাওয়ার জন্য লজ্জা কম থাকতেই হবে।

১০।আত্মসম্মান বোধ না থাকা অপরিহার্য।আত্মসম্মানবোধ থাকলে আর যাই করা সম্ভব হোক না কেন;নিজের ক্ষোভ,ইচ্ছা,রুচি সব কিছু বিসর্জন দিয়ে আরেকজনকে তৈলমর্দন করে যাওয়া সম্ভব হবে না। 

চাটুকারদের টিকে থাকার রহস্যঃ
প্রায় সবাই দেখবেন চাটুকারদেরকে পছন্দ করে না।আর চাটুকারেরা সংখ্যায়ও খুব বেশী না।কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এরা যুগ যুগ ধরে, কালের পর কাল অতি সফলতার সাথে টিকে আছে।এর প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থ,ক্ষমতা,স্নেহ এমনকি ভালোবাসা দিয়েও যা আদায় করা যায় না সেটা তেলবাজী করে আদায় করা সম্ভব হয়।বিনে পুজির এই ব্যবসায় সবচেয়ে কম সময়ে বেশী ইনকাম করা সম্ভব।আরেকটা বিষয় হচ্ছে এই তেল মারার শিক্ষা লাভের জন্য কোন বিশেষ পাঠশালা বা পাঠ্য পুস্তকের দরকার পড়ে না;এটা স্ব উদ্ভাবনীয় একটা পদ্ধতি।

সেজন্যই নিজের আত্মসম্মানবোধ ও লজ্জা বিসর্জন দিয়ে অতি সহজেই যে কেউ এই দীক্ষা লাভ করতে পারে।আর চাটুকারদের টিকে থাকার সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।চাটুকারেরা চেটে দেয় আর গ্রহীতা তাতে সিক্ত হয়ে শিহরিত হতে থাকে।মুখে আমরা যতই চাটুকারের বিপক্ষে কথা বলি না কেন কোন এক সুদক্ষ চাটুকারের চেটে দেয়ায় আমরা নিজেরাও পুলকিত হতে থাকি,তাই চাটুকারের আধিপত্য থেকেই যায়।

উপসংহারঃ
চাটুকারেরা ছিল,চাটুকারেরা আছে এবং চাটুকারেরা থাকবেও;অন্তত যতদিন আমরা চাটুকার ও তার চাটা গ্রহীতাকে সমানভাবে ঘৃণা না করব।আসুন আমরা সবাই মিলে চাটুকারদের সামাজিকভাবে বর্জন করি।আর যদি না করতে পারি তাহলে আমি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তাদেরকে শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই: